ব্রাহ্মবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উক্ত প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোর্শেদ কামাল বিদ্যালয়ে গত ২২-০৮-২০২২ইংতারিখে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অভিনব কায়দায় অতিরিক্ত ফি আদায়,কোচিং বাণিজ্য,নিয়ম বহির্ভূত ভাবে স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য নিয়োগসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠে।
অনুসন্ধানে জানা যায়,বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বে শিক্ষকেরা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই চালাছেন ষষ্ঠ,সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১টা ৫০ মিনিটি পর্যন্ত পাঠদান।বিদ্যালয়টি দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সাথে এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি একটি বিষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রিপন দেবনাথ কোচিং বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। শ্রেণি কক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে অবহেলা করছেন।
এ ছাড়া শক্তি দেবনাথ কোচিং সেন্টার এসব কোচিং সেন্টারে না পড়লে পরীক্ষায় অকৃতকার্য করানোরও অভিযোগ রয়েছে। ফলে অভিভাবকরা বাধ্য হয়ে তাদের ছেলেমেয়েদের এসব কোচিং সেন্টারে পাঠাচ্ছে। বছরের পর বছর এ কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।এই বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পযর্ন্ত ছাত্র -ছাত্রীকে এসব কোচিং সেন্টারে পড়ানো হয়।
খোঁজ নিয়ে আরো জানায় যায়,এসব শিক্ষাার্থীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৩০০/৪০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। এভাবে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন শিক্ষকসহ শক্তি দেবনাথ।
এ বিষয়ে সহকারী শিক্ষক রিপন দেবনাথ ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টো বলেন,উপজেলা এসি ল্যান্ড স্যার,চান্দুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি, প্রধান শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে প্রাইভেট পড়ানো হয়।প্রতি ব্যাচে ৪০ জন করে পড়ানোর কথা বলা হয়েছে।রিপন দেবনাথ আরোও বলেন, আমি দুইটি ব্যাচ পড়াই।
এ বিষয়ে শক্তি দেবনাথ বলেন,প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি, প্রধান শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে প্রাইভেট পড়ানো হয়।তিনি সকাল থেকে শুরু করে রাত ৮ টা পর্যন্ত ব্যাচ পড়ান।
অষ্টম শ্রেণীর দুই শিক্ষার্থীর বলেন,শিক্ষক রিপন দেবনাথ কোচিং সেন্টারে সকাল ৮ টা থেকে ৯টা পর্যন্ত প্রাইভেট পড়েন প্রতি মাসে ৪০০টাকা করে।
স্কুল শুরু ও ছুটির বিষয় জানতে চাইলে শিক্ষার্থীরা বলেন,সকাল ৯ টা ক্লাস শুরু ছুটি হয় ১টা ৫০ মিনিটে।এই বছরও পরীক্ষা ২০০টাকা দিতে হচ্ছে।
সপ্তম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর বলেন,শক্তি দেবনাথ কোচিং সেন্টারে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে আজ পর্যন্ত প্রাইভেট পড়তেছি।গত বছর ষষ্ঠ শ্রেণিতে চান্দুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা জন্য ২০০ টাকা ফি দিতে হয়েছে।এ ছাড়া শক্তি দেবনাথ কোচিং সেন্টারে চতুর্থ শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পযর্ন্ত ছাত্র -ছাত্রী প্রাইভেট পড়েন বলেও জানান শিক্ষার্থীর।
সপ্তম শ্রেণীর আরোও দুই শিক্ষার্থীর বলেন,সকাল ৯ টা ক্লাস শুরু ১টা ৫০ মিনিটে ছুটি হয়।ষষ্ঠ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা ’২৫০ টাকা ফি দিতে হয়েছে।
পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্র এর অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,তার ছেলেকে শক্তি দেবনাথ কোচিং সেন্টারে প্রাইভেট পড়াতে হচ্ছে।বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোর্শেদ কামাল নিয়ম বহির্ভূত ভাবে তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টোকে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য করেছেন।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ২শাখা থেকে পাঠানো অনুলিপিতে বলাহয়েছে।সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালযয়ের পরিচালনা কমিটির সদস্য আইনানুগভাবে এভিডেভিট/নোটারী গ্রহণ যোগ্য নয়।ছাত্র-ছাত্রীর অভিভাবক হবেন কমিটির বিদ্যুৎসাহী ও অভিভাবক সদস্য।কিন্তু সম্প্রতি একটি বিষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে,অবৈধ ভাবে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।মানিকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি না করে বিভিন্ন মন্তব্য করার অভিযোগ রয়েছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোর্শেদ কামালের বিরুদ্ধে।
এদিকে বিদ্যালয়টি নিয়ে নিউজ করলে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি প্রকাশ্যে চলে আসা ভয়ে বিদ্যালয পরিচালনা কমিটির অবৈধ সদস্য তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টোর শুরু হয় দৌড়ঝাঁপ।এর মধ্যে নিউজ না করার জন্য আমাদের প্রতিবেদকে নিষেধ করতে চান্দুরা ইউনিয়নের ১নং ও ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি বাদল সাহা ও মো: শাহজাহান মিয়াকে একাধিকবার অনুরোধ করেন তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টো্।বিদ্যালয পরিচালনা কমিটির অবৈধ সদস্য তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টোর অনুরোধে এই দুই সভাপতি আমাদের প্রতিবেদকে নিষেধ করেন। প্রসঙ্গে তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টোর কাছে জানতে চাইলে তিনি সংযোগটি কেটে দেন।পরে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।এ ব্যাপারে চান্দুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোর্শেদ কামালের কাছে জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ত বলে সংযোগটি কেটে দেন।
পরে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।শেষ পর্বে থাকছে, অনিয়ম-দুর্নীতি প্রকাশ্যে চলে আসায় তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টো ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোর্শেদ কামাল এখন নিজেদের বাঁচাতে দৌড়ঝাঁপে ব্যস্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে।এবং বিদ্যালয পরিচালনা কমিটির সদস্য পদ বাঁচাতে চান্দুরা বাজার থেকে বড় বড় মাছ নিয়ে গেল কার বাসায়।
-মেহেদী হাসান মিলন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া