শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (বর্তমানে রাজবাড়ীর পাংশায় বদলি) ইকবাল মাহমুদের বাসভবন থেকে ১৩ বস্তা চাল ও ১১০০ খালি বস্তা জব্দ করা হয়। এরপর তা সিলগালা করে দেয় উপজেলা প্রশাসন। এছাড়া গুদামে ১৮ টন চালেরও ঘাটতি ছিল। কিন্তু এ নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদনে এই ঘাটতির তথ্য নেই। এ কারণে হতাশ উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয়রা।
ইকবাল মাহমুদের বাসভবনের সেই ঘর সিলগালা করার পরদিন আলামত নষ্ট করার জন্য গ্রিল কেটে জব্দকৃত চাল-বস্তা সরানো চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। ১৮ টন চালের ঘাটতি মেটাতে তদন্তকারী কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার যোগসাজশে বাইরে থেকে চাল কিনে গুদামের ভেতর ঢুকিয়ে চালের ঘাটতি পূরণ করেন। এমটাও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক।
জানা যায়, গত ১১ নভেম্বর ১৩ বস্তা সরকারি চাল ও এক হাজার ১০০টি খালি বস্তা অবৈধভাবে মজুত রাখার দায়ে ভেদরগঞ্জ উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইকবাল মাহমুদের বাসভবনটি সিলগালা করে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল মামুন।
এ ঘটনার পরদিন ১২ নভেম্বর সন্ধ্যায় সেই সিলগালা বাসভবনের জানালার গ্রিল কেটে মালামাল সরানোর সময় ইউএনওর হাতে ধরা পড়েন ইকবাল মাহমুদ। তবে এ সময় একটি সাদা ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যান ইকবাল মাহমুদের সহযোগী নিরাপত্তাপ্রহরী আবু হানিফ খান (রুবেল)। মোবাইল ফোন ও প্রয়োজনীয় জামাকাপড় বের করার জন্য গ্রিলটি কেটেছেন বলে জানান ইকবাল ও আবু হানিফ। অন্য একটি সূত্র বলছে, সিলগালা বাসার ভেতরে থাকা মোটা অংকের টাকা সরাতেই এমন কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন ইকবাল।
১৩ নভেম্বর ঘটনার বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত করতে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক। কমিটির সদস্যরা হলোন-ভেদরগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. নুরুল হক, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক মো. মিজানুর রহমান ও জাজিরা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সেলিম আহমদকে।
তদন্তকালে খাদ্যগুদামে ১৮ টন চালের ঘাটতি ছিল। তিন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিলে গত ১৪ নভেম্বর ১০ টন ও ১৫ নভেম্বর ৮ টন চাল ট্রাকে করে বাইরে থেকে এনে খাদ্যগুদামে রেখে ঘাটতি পূরণ করেন। বিষয়টি ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানতে পেরে ওই তদন্তকারী তিন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসা করলে বাইরে থেকে খাদ্যগুদামে ১০ টন চাল ঢোকানোর বিষয়টি স্বীকার করেন। পরে ১৬ নভেম্বর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদনে খাদ্যগুদামে চালের ঘাটতির কথা উল্লেখ করা হয়নি।
স্থানীয়রা বলেন, ভেদরগঞ্জ উপজেলা খাদ্যগুদাম তৈরি হওয়ার পর চাল ও বস্তা চুরির ঘটনা এই প্রথম। ইকবাল মাহমুদ আসার পর এমন চুরির ঘটনা ঘটল, যা দুদক পর্যন্ত গড়িয়েছে।
খাদ্যগুদামের নিরাপত্তা প্রহরী আবু হানিফ খান (রুবেল) টাকার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, তিনি খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বাসার গ্রিল কাটার পর জামাকাপড়ের ব্যাগ ও মোবাইল বের করে ভয়ে পালিয়েছিলেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘মোবাইল বের করার জন্য গ্রিল কেটেছিলাম। কিন্তু বস্তা বের করার জন্য কাটিনি। খাদ্যগুদামের মালামাল পরিপূর্ণ রয়েছে, কোনো ঘাটতি নেই।’
ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, পর্যাপ্ত তথ্য আমার হাতে থাকার কারণে তিনজন তদন্ত কর্মকর্তা ও খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইকবালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুদকে আমি চিঠি দিয়েছি। এ ছাড়া জেলা প্রশাসক মহোদয় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্যসচিব বরাবর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চিঠি লিখেছেন।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মোশারফ হোসেন বলেন, ইকবাল মাহমুদের বাজে কাজের জন্য বা শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লিখেছি। অচিরেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাকে রাজবাড়ী পাংশায় বদলি করা হয়েছে। আমরা যে তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি, তাতে লেখা হয়েছে ভেদরগঞ্জ উপজেলা খাদ্যগুদামের চতুর্থ শ্রেণির দুই কর্মচারীদের অন্যত্র বদলি করা হোক। খাদ্যগুদাম ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার রুমে যে ১৩ বস্তা চাল পাওয়া গেছে, তা অবৈধ মজুদ। এ ছাড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে খাদ্যগুদামের মালামাল পরিপূর্ণ রয়েছে, কোনো ঘাটতি নেই।