আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে পুলিশের সব থানার ওসিদের পর্যায়ক্রমে বদলির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। এরমধ্যে পুলিশের সবচেয়ে বড় একক ইউনিট ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ৫০টির মধ্যে ৩৩ থানার ওসির রদবদল সংক্রান্ত নথি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এদিকে, ঢাকার ভেতরেই ডিএমপি ৩৩ থানার ওসিকে রাখার প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনে (ইসি) পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি ইসির অনুমোদন পেলে সেই প্রজ্ঞাপন বুধবার (৬ ডিসেম্বর) জারি হতে পারে।
সূত্রমতে, সদরদপ্তর থেকে বদলির তালিকা করে পাঠানো প্রস্তাবে ৩৩ ওসিকে বর্তমান কর্মস্থলের পাশের নির্বাচনী এলাকায় রাখার কথা বলা হয়েছে।
ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ঢাকা মহানগরের ৫০ থানার মধ্যে যেসব থানার ওসি বর্তমান কর্মস্থলে ছয় মাসের বেশি সময় পার করেছেন, তাদের বদলির প্রস্তাব ইসিতে পাঠানো হয়েছে। কমিশন থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর বদলির আদেশ জারি হবে।
বাংলাদেশ পুলিশের সবচেয়ে বড় একক ইউনিট ডিএমপি। প্রায় ৩৪ হাজার বিভিন্ন পদ মর্যাদার সদস্য এই ইউনিটে কর্মরত। ৫০টি থানা নিয়ে ডিএমপি। এর মধ্যে ৩৩ থানার ওসি পদে রদবদল আসছে। ঘুরেফিরে অনেকে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ থানায় ছিলেন। একযোগে রাজধানীতে এত সংখ্যক থানায় ওসি পদে নতুন মুখ আসার ঘটনা সম্প্রতি ঘটেনি। যাদের রদবদল করা হচ্ছে, তারা সবাই ছয় মাসের বেশি ওই থানায় দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
জানা গেছে, ছয় মাসের বেশি দায়িত্ব পালন করেছেন এমন থানার সব ওসিকে বদল করতে চায় ইসি। ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের বদলির প্রস্তাব ইসিতে পাঠাতে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এরপরই পুলিশের নীতিনির্ধারকরা কে কোন থানায় ছয় মাসের বেশি রয়েছেন তাদের তালিকা তৈরি করা শুরু করেন। মহানগর, রেঞ্জসহ ইউনিটভিত্তিক পৃথক পৃথক তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এতে অনেক ওসির কপাল পুড়বে, আবার কারও খুলবে ভাগ্য।
ডিএমপির ৫০ থানার মধ্যে অন্তত ২১ থানার ওসি রাজধানীতেই দুই বছরের বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ৫ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত ঘুরেফিরে ডিএমপির বিভিন্ন থানায় থাকছেন ১৩ ওসি। দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে থানার ওসিদের বদলির নিয়ম রয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি সদরদপ্তরের কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, পুলিশ পরিদর্শক বি এম ফরমান আলী ২০১৩ সালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে যোগ দেন। পরে তাকে মতিঝিল থেকে বনানী থানার ওসি হিসেবে বদলি করা হয়। এরপর সেখান থেকে ডিএমপির বিমানবন্দর থানার ওসির দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। পুলিশের এই কর্মকর্তাকে গত বছর গুলশান থানার ওসি করা হয়। প্রায় ১০ বছর ঘুরেফিরে তিনি ডিএমপিরই বিভিন্ন থানায় দায়িত্ব পালন করছেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালে মো. মোস্তাজিরুর রহমান ডিএমপির খিলক্ষেত থানায় ওসি হিসেবে যোগ দেন। সেখান থেকে তাকে মিরপুর মডেল থানায় বদলি করা হয়। তিনি এখন ডিএমপির ওয়ারী থানার দায়িত্ব পালন করছেন।
নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিএমপির ওসিদের এক নির্বাচনী এলাকা থেকে অন্য নির্বাচনী এলাকায় বদলি করা হবে।
শুধু ফরমান আলী ও মোস্তাজিরুরই নন, তাদের মতো আরও ১১ জন ওসি নানাভাবে ৫ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত ঘুরেফিরে ডিএমপির বিভিন্ন থানায় থাকছেন। দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে থানার ওসিদের বদলির নিয়ম রয়েছে।এমনটা্ই জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র। ডিএমপির ৫০ থানার মধ্যে অন্তত ২১ থানার ওসি ডিএমপিতেই দুই বছরের বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
২০১৪ সালে কদমতলী থানার ওসি হন মাজহারুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় ওসি হিসেবে কর্মরত। প্রায় ৯ বছর ধরে তিনি ডিএমপিতেই আছেন। মাজহারুল ইসলাম বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক।
বিমানবন্দর থানার ওসি মোহাম্মদ ইয়াসির আরাফাত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে ডিএমপিতে আছেন। ক্যান্টনমেন্ট থানার ওসি মুন্সী ছাব্বির আহম্মেদ ১০ বছর, পল্টন থানার ওসি মো. সালাহউদ্দিন মিয়া ১০ বছর, কাফরুল থানার ওসি ফারুকুল আলম ৯ বছর, ধানমন্ডি থানার ওসি পারভেজ ইসলাম ৮ বছর, তুরাগ থানার ওসি মওদুত আহমেদ ৮ বছর, কদমতলী থানার ওসি প্রলয় কুমার সাহা ৭ বছর, খিলক্ষেত থানার ওসি কাজী সাহান হক ৭ বছর, ভাষানটেক থানার ওসি জানে আলম মুনশী ৬ বছর এবং দক্ষিণখান থানার ওসি সিদ্দিকুর রহমান ৫ বছর ধরে ডিএমপিতেই রয়েছেন।
সূত্রাপুর থানার ওসি মঈনুল ইসলাম ৪ বছর, মতিঝিলের ওসি আবুল কালাম আজাদ ৪ বছর, যাত্রাবাড়ীর ওসি মফিজুল আলম ৪ বছর, শেরেবাংলা নগর থানার ওসি উৎপল বড়ুয়া ৩ বছর, গেন্ডারিয়ার ওসি আবু সাঈদ আল মামুন ৩ বছর, লালবাগের ওসি হেলাল উদ্দিন প্রায় আড়াই বছর এবং উত্তরখান থানার ওসি আবুল কালাম ২ বছরের বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করছেন ডিএমপিতে।
এ ছাড়া ভাটারা থানার ওসি মাইনুল ইসলাম ৮ বছর ডিএমপির একাধিক থানায় ওসি হিসেবে থাকার পর ঢাকার বাইরে বদলি হন। সম্প্রতি তাকে আবার ভাটারা থানারই ওসির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।