বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি গভীর নিম্নচাপ। ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’এর আঘাতের ২২ দিনের মাথায় বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট আরেক গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে সঞ্চালনশীল মেঘমালায় ভর করে দক্ষিণ উপকূল জুড়ে বৃষ্টিপাতের আশংকায় মাঠে থাকা ৮ লাক্ষাধিক হেক্টরের আমন ও প্রায় ৬৫ হাজার হেক্টরে আবাদরত শীতকালীন সবজির ভবিষ্যত নিয়ে সকলেই দুঃশ্চিন্তায়।
সবজি আবাদ বিলম্বিত হওয়ার পাশাপাশি মাঠে থাকা আমনে লেদা পোকা ও বাদামী ঘাস ফরিং পোকার আক্রমনের শংকার কথাও জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএইর দায়িত্বশীল মহল। পাশাপাশি বৃষ্টিপাতের পরিমান বাড়লে আরো বিপুল পরিমান পাকা ও আধাপাকা ধান মাটিতে শুয়ে পড়তে পারে।
বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের সব নদী বন্দরকে ২ নম্বর হুশিয়ারী সংকেতের পাশাপাশি পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া বিভাগ। নিম্নচাপটির ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে ৫০-৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বইছে। সাগর উপকূলও কিছুটা উত্তাল রয়েছে। সাগরে যাওয়া সব মাছ ধরা ট্রলার ও নৌকা সমূহকে অতি দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে ফিওে আসতে বলা হয়েছে। এদিকে সমগ্র দক্ষিণঅঞ্চলে গুমোটভাব চলছে। বৃষ্টিনা হলেও দিনের কোন সময়েই রৌদ্রজ্বল ছিলনা।
আবহাওয়া বিভাগের প্রকাশিত নকশা অনুযায়ী গভীর নিম্নচাপটি শনিবার দুুপুর নাগাদ বরিশাল ও খুলনা উপকূল অতিক্রম করতে পারে। তবে এ নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ে হাওয়া সহ ৪৫-৯০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথাও বলেছে আবহাওয়া বিভাগ।
এদিকে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের মতে দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ৮.৭০ লাখ হেক্টরেরও বেশি জমিতে আমনের আবাদ হলেও মাত্র ৫ ভাগ ফসল কাটা সম্ভব হয়েছে। মাঠে মাঠে এখন পাকা ও আধা পাকা ধান ভরে আছে। ডিএইর বরিশাল অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক জানিয়েছেন, হেমন্তের এ বৃষ্টিপাত আমনে পোকার আক্রমন বৃদ্ধি করতে পারে। তেমনি আবাদকৃত সবজিতে বিপর্যয় সৃষ্টির পাশাপাশি নতুন আবাদকেও বিলম্বিত করবে। চলতি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় প্রায় ৬৫ হাজার হেক্টরে শীতকালীন সবজির আবাদের লক্ষ্যে জমি তৈরী শুরু হয়েছে।
কিন্তু গত ২৪ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ সহ মাসের বিভিন্ন সময়ে বিরূপ আবহাওয়ায় বরিশালে গত মাসে স্বাভাবিকের ৪৫% বেশী বৃষ্টি হওয়ায় শীতকালীন সবজীর আবাদ বিলম্বিত হচ্ছে। কিন্তু সেই রেশ না কাটতেই বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট আরেকটি গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে মেঘমালায় ভর করে দক্ষিণ উপকূলে ঝড়ের পূর্বাভাস দিল আবহাওয়া বিভাগ।
প্রায় প্রতি বছরই অক্টোবর থেকে নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একাধিক নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিয়ে বরিশাল সহ উপকূলে আঘাত হানে।
গত বছর ২০ অক্টোবর বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’এর বয়ে আনা গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার প্রবল বর্ষণে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল সয়লাব হয়ে যাবার সাথে মাঠে থাকা আমন ধান মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে যায়। ১৯৭০ সনের ১২ নভেম্বর রাতে ভয়াল ঘূর্ণিঝড় ‘হেরিকেন’ (গোর্কির) এর আঘাতে ৫ লাখ মানুষের প্রাণহানী ঘটে। ২০০৭ সনের ১৫ নভেম্বর রাতে আরেক ভয়াল ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’এর আঘাতেও উপকূলে সাড়ে ৩ হাজার মানুষের প্রাণহানীর পাশাপাশি প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার সম্পদহানী হয়। সে রাতে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে সোনালী আমন ধান সম্পূর্ণই বিনষ্ট হয়েছিল। এর আগে পওে আয়লা প্রাণহানি না ঘটালেও সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
তারপরেও কয়েকটি মাঝারী থেকে বড় আকারের ঘূর্ণিঝড় উপকূল সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের জনপদের পর জনপদকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে গেছে।