ঢাকা ০৪:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দূষিত হচ্ছে সুপেয় পানি, ক্যানসার ঝুঁকিতে মানুষ

সুপেয় পানি দূষিত হওয়ার কারণে ক্যানসারের ঝুঁকিতে পড়েছে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রবন্ধে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, অনাকাঙ্খিত বন্যা এবং জলবায়ু উত্তপ্ত হওয়ার কারণে চরম আবহাওয়া বাংলাদেশের পানিতে আর্সেনিকের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিতে পারে। গবেষণায় বলা হয়, আর্সেনিকের বিষক্রিয়ার ফলে লাখ লাখ বাংলাদেশের মানুষের ত্বক, মূত্রাশয় এবং ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছে।

গবেষণাটির প্রধান গবেষক যুক্তরাষ্ট্রের নরউইচ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. সেথ ফ্রিসবি বলেছেন, এই সংকট কেবল বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের বাসিন্দাদেরও আর্সেনিক বিষক্রিয়া প্রভাবিত করছে।

বাংলাদেশে পানিতে আর্সেনিক সংকটের শুরু গত শতকের ৭০-এর দশকে। তখন দূষিত পানির কারণে বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুর হার বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ছিল।

গবেষক বলেন, সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধির এই রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় পলি থেকে আর্সেনিক বাংলাদেশের ভূগর্ভস্থ পানিতে মিশে যায়। পলি থেকে নির্গত আর্সেনিক বাংলাদেশের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের নলকূপের পানিতেও মিশছে।

পরে জাতিসংঘের সহায়তা সংস্থা এবং বেসরকারি অলাভজনক সংস্থাগুলো বাংলাদেশে গভীর নলকূপ স্থাপন করে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহারের জন্য একটি বড় কর্মসূচির পৃষ্ঠপোষকতা করে। এতে শিশু মৃত্যুর হার কমে আসে। কিন্তু ৯০ দশকে এটি স্পষ্ট হয়ে যায় যে বাংলাদেশের তলদেশের পাললিক শিলা থেকে তোলা পানিতেও প্রাকৃতিকভাবে উচ্চ মাত্রার আর্সেনিক রয়েছে।

খাবার পানি থেকে দীর্ঘস্থায়ী আর্সেনিক বিষক্রিয়ার প্রথম ঘটনা বাংলাদেশে ১৯৯৩ সালে শনাক্ত করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে ইতিহাসে একটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে বড় গণ বিষক্রিয়া হিসাবে বর্ণনা করেছিল।

ফ্রিসবি বলেন, আর্সেনিক প্রাকৃতিকভাবে ঘটছে। এটি হিমালয়ের ওপর থেকে পলি নিয়ে আসছে। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা, ইরাবতী ও মেকং নদীর অববাহিকা থেকে আসা সমস্ত পলি প্রাকৃতিকভাবে আর্সেনিক সমৃদ্ধ।

গবেষকরা বলেছেন, বাংলাদেশের ৪৯ শতাংশ এলাকার কূপের পানিতে আর্সেনিকের অনিরাপদ মাত্রার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, পানিতে আর্সেনিকের সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রা ১০ পার্টস পার বিলিয়ন (পিপিবি)। কিন্তু গবেষণায় বাংলাদেশের একটি কূপের পানিতে ৪৪৮ পিপিবি আর্সেনিক পাওয়া গেছে।

গবেষক ফ্রিসবি বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে সাড়ে ৭ কোটি মানুষ ক্যানসারের ঝুঁকিতে রয়েছে। আমি অনুমান করছি যে প্রায় ৯ লাখ বাংলাদেশী ফুসফুস এবং মূত্রাশয় ক্যান্সারে মারা যেতে পারে।

জলবায়ু সংকট এ ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বিশ্বের বৃহত্তম ব–দ্বীপ বাংলাদেশে অতিবন্যার শঙ্কা রয়েছে যা ভূগর্ভস্থ পানির রাসায়নিক গঠন পরিবর্তন করে দিতে পারে। এতে সমুদ্রের পানি ভূগর্ভস্থ পানির সঙ্গে মিশে গিয়ে লবানাক্ততা বেড়ে যেতে পারে। এতেও পানিতে থাকা আর্সেনিকের পরিমাণ বাড়তে পারে।

ট্যাগ:

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সেভ রাখুন

সংবাদ প্রকাশকের তথ্য

দূষিত হচ্ছে সুপেয় পানি, ক্যানসার ঝুঁকিতে মানুষ

আপডেট সময় ১২:৩৫:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৪

সুপেয় পানি দূষিত হওয়ার কারণে ক্যানসারের ঝুঁকিতে পড়েছে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রবন্ধে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, অনাকাঙ্খিত বন্যা এবং জলবায়ু উত্তপ্ত হওয়ার কারণে চরম আবহাওয়া বাংলাদেশের পানিতে আর্সেনিকের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিতে পারে। গবেষণায় বলা হয়, আর্সেনিকের বিষক্রিয়ার ফলে লাখ লাখ বাংলাদেশের মানুষের ত্বক, মূত্রাশয় এবং ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছে।

গবেষণাটির প্রধান গবেষক যুক্তরাষ্ট্রের নরউইচ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. সেথ ফ্রিসবি বলেছেন, এই সংকট কেবল বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের বাসিন্দাদেরও আর্সেনিক বিষক্রিয়া প্রভাবিত করছে।

বাংলাদেশে পানিতে আর্সেনিক সংকটের শুরু গত শতকের ৭০-এর দশকে। তখন দূষিত পানির কারণে বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুর হার বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ছিল।

গবেষক বলেন, সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধির এই রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় পলি থেকে আর্সেনিক বাংলাদেশের ভূগর্ভস্থ পানিতে মিশে যায়। পলি থেকে নির্গত আর্সেনিক বাংলাদেশের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের নলকূপের পানিতেও মিশছে।

পরে জাতিসংঘের সহায়তা সংস্থা এবং বেসরকারি অলাভজনক সংস্থাগুলো বাংলাদেশে গভীর নলকূপ স্থাপন করে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহারের জন্য একটি বড় কর্মসূচির পৃষ্ঠপোষকতা করে। এতে শিশু মৃত্যুর হার কমে আসে। কিন্তু ৯০ দশকে এটি স্পষ্ট হয়ে যায় যে বাংলাদেশের তলদেশের পাললিক শিলা থেকে তোলা পানিতেও প্রাকৃতিকভাবে উচ্চ মাত্রার আর্সেনিক রয়েছে।

খাবার পানি থেকে দীর্ঘস্থায়ী আর্সেনিক বিষক্রিয়ার প্রথম ঘটনা বাংলাদেশে ১৯৯৩ সালে শনাক্ত করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে ইতিহাসে একটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে বড় গণ বিষক্রিয়া হিসাবে বর্ণনা করেছিল।

ফ্রিসবি বলেন, আর্সেনিক প্রাকৃতিকভাবে ঘটছে। এটি হিমালয়ের ওপর থেকে পলি নিয়ে আসছে। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা, ইরাবতী ও মেকং নদীর অববাহিকা থেকে আসা সমস্ত পলি প্রাকৃতিকভাবে আর্সেনিক সমৃদ্ধ।

গবেষকরা বলেছেন, বাংলাদেশের ৪৯ শতাংশ এলাকার কূপের পানিতে আর্সেনিকের অনিরাপদ মাত্রার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, পানিতে আর্সেনিকের সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রা ১০ পার্টস পার বিলিয়ন (পিপিবি)। কিন্তু গবেষণায় বাংলাদেশের একটি কূপের পানিতে ৪৪৮ পিপিবি আর্সেনিক পাওয়া গেছে।

গবেষক ফ্রিসবি বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে সাড়ে ৭ কোটি মানুষ ক্যানসারের ঝুঁকিতে রয়েছে। আমি অনুমান করছি যে প্রায় ৯ লাখ বাংলাদেশী ফুসফুস এবং মূত্রাশয় ক্যান্সারে মারা যেতে পারে।

জলবায়ু সংকট এ ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বিশ্বের বৃহত্তম ব–দ্বীপ বাংলাদেশে অতিবন্যার শঙ্কা রয়েছে যা ভূগর্ভস্থ পানির রাসায়নিক গঠন পরিবর্তন করে দিতে পারে। এতে সমুদ্রের পানি ভূগর্ভস্থ পানির সঙ্গে মিশে গিয়ে লবানাক্ততা বেড়ে যেতে পারে। এতেও পানিতে থাকা আর্সেনিকের পরিমাণ বাড়তে পারে।