ঢাকার কেরানীগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের বাধা-নির্যাতন ও আন্দোলনে অংশ নেওয়া ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী জিহাদকে গুলি হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমান প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থী ও নিহতের পরিবার। হত্যা মামলায় বাকি আসামিরা পলাতক থাকলেও মজিবুর রহমান প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। হত্যা মামলার মূল কাগজপত্র ফাইল ও তার অবৈধ যাবতীয় প্রমাণাদি ইতিমধ্যে এই প্রতিবেদকের হাতে এসে পৌঁছেছে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট সকালে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার বসিলা ব্রিজের নিচে ছাত্রদের উপর মজিবরসহ অন্যান্য আসামিরা মিলে নির্মমভাবে গুলি চালায়। এতে বুলেট বিদ্ধ হয়ে  শিশু জিহাদ গুরুতর আহত হয়। এরপর তাকে চিকিৎসার জন্য গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজে নেয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জিহাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা প্রদান করেন। তবে তার শরীরের অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে শরীরের ভেতরে গেঁথে যাওয়া বুলেট বের করা সম্ভব হয়নি। চিকিৎসকের পরামর্শে  শিশু জিহাদকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে জিহাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয় । তখন সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক জিহাদকে চিকিৎসা দিতে না পেরে বাড়িতে নিয়ে যেতে বলেন। চিকিৎসকরা জানান, জিহাদের আর কোন চিকিৎসা নেই, তার শরীরের অবস্থা এতই খারাপ যে এখন অস্ত্রোপচার  করা সম্ভব নয়। পরবর্তীতে শিশু জিহাদকে মুমূর্ষ অবস্থায় বাড়িতে রেখে সেবা দেওয়া হলেও বেশ কিছুদিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে গত ৩ সেপ্টেম্বর মারা যায়। পরবর্তীতে নিহত শিশু জিহাদের বাবা জহিরুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এদিকে, শিশু সন্তানকে হারিয়ে মা-বাবা পাগল প্রায়। অন্যদিকে আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এমন খবরে হতাশ ও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে শিশু জিহাদের স্বজনরা।  এমন নিশংস হত্যাকাণ্ডের আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে ফাঁসির দাবি করেন স্বজনরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতা কেরানীগঞ্জের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদকে ব্যবহার করে অন্যের জমি দখল করেন। চেয়ারম্যানের সাথে ছবি তুলে নিজের সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করে বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম করতেন। আরও এইসব অপকর্ম ঢাকতে তিনি একটি অনলাইনে পত্রিকায় কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আনন্দ টেলিভিশনের কেরানীগঞ্জ উপজেলা সদর প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ নিয়ে আসেন। এই সাংবাদিকতাকে পুজি করে তিনি অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেন।

এলাকাবাসী জানান, নামমাত্র শিক্ষিত মজিবুর রহমান শেখ হাসিনা সরকারের আমলে অবৈধ উপায় জমির ব্যবসা করে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। সরকার পতনের পর উপজেলা চেয়ারম্যান পালিয়ে গেলেও সাংবাদিক ও নিজেকে বিএনপির কর্মী পরিচয় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মুজিবুর।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর আগেও মজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে এলাকায় চাঁদাবাজি, মারামারি ও একাধিক মাদক মামলা হয়েছিলো। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরও সে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাপুর এলাকার একটি বাড়ির জমি দখল করতে গিয়ে এলাকাবাসীর ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে যায়। তার নিজ এলাকা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের সাধারণ মানুষের অভিযোগ, তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় কথা বলা যেত না। অন্যায়ের প্রতিবাদ করা যেত না। প্রতিবাদ করলেই তাহলেই মানুষের উপর নির্যাতন ও মামলার ভয় দেখাতো। আ্ওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও আগের মতো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মজিবুর রহমান। তার এক ছেলেকে দিয়ে মাদক ব্যবসা করার অভিযোগও করেন এলাকাবাসী। আনন্দ টিভির পরিচয় বহনকারী ফিতা গলায় লাগিয়ে নির্ধিদ্বায় মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

হত্যা মামলার আসামি আওয়ামী লীগ নেতা মজিবুর রহমানের নিজ এলাকা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বটতলিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুজিবুর রহমান প্রাথমিক বিদ্যালয় পড়া শেষ না করেও আনন্দ টেলিভিশনের প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ ভাগিয়ে নেয়। গলায় ফিতা ও হাতে বুম নিয়ে ঘুরেন।

জানা গেছে, মুজিবুর রহমান পড়ালেখা না জানলেও স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিককে মাসিক ভিত্তিতে টাকা দিয়ে সংবাদ লেখা ও ভিডিও এডিটিংসহ যাবতীয় কাজ করে থাকেন। কারণ টেলিভিশনের কার্ড ব্যবহার করে তিনি যে কোন অবৈধ কাজ করে যান নিশ্চিন্তে। অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন করে বর্তমানে তিনি দামি গাড়িতে আনন্দ টিভির স্টিকার লাগিয়ে বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি করে থাকেন বলে অভিযোগ করেন অনেকে।

হত্যা মামলার আসামি মজিবরের রয়েছে আরও অনেক অভিযোগ। সরকার পতনের পর নিজেকে বাঁচাতে এখন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদ ও সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নজরুল হামিদ বিপু’র বদনাম করে বিএনপির জাতীয় নেতা বাবু গয়েশ্বরচন্দ্র রায় ও ডাকসুর সাবেক ভিপি বিএনপির আমান উল্লাহ আমানের কাছে ভেড়ার চেষ্টা করছেন। এখন হর হামেশাই তার মুখ থেকে সাবেক আওয়ামী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কথা বলতে শোনা যায় বলেও জানান এলাকাবাসী।

বিএনপি’র একটি সূত্র বলছে, ৫ আগস্ট বিপ্লবের আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যারা বাধা দিয়ে সাধারণ ছাত্রদের নির্বিচারে হত্যা করেছে তাদের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে নেয়ার কোন প্রশ্নই আসে না। বরং তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।